শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

লাখাইয়ে ব্রি-২৮ ধানে চিটা : কৃষকের মাথায় হাত

  • সানি চন্দ্র বিশ্বাস :
image

লাখাই, (হবিগঞ্জ)  ২৩ মার্চ : লাখাইয়ের একাধিক হাওরের ফসলি জমির আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধানে চিটা ( ছোঁচা) দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন পর সোনালী ফসল ঘরে তুলবে এই  আনন্দে যখন মাতোয়ারা তখন ধানে ধানে চিটা দেখা দেয়ায় কৃষকের চোখে মুখে এখন হতাশার ছাপ। 
সেই সাথে তারা ফসলহানির আশঙ্কা করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, ক্ষেতের বেশির ভাগ ধানের ভেতর চালের বদলে চিটা হয়েছে। কি কারনে এমনটা হয়েছে বলতে পারছেন না অনেকে। তবে অন্যান্য ধানের জাতে এমনটা হয়নি। উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের কারণে ব্রি-২৮ জাত বেশ জনপ্রিয়। তবে এবার এই জাতের ধান চাষ করে লোকসানে পড়েছেন লাখাই উপজেলার ১নং লাখাই ইউনিয়নের হাওরের কৃষকরা। জানতে চাইলে লাখাই  উপজেলা  উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্য বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফসল সম্পূর্ণ সাদা হয়ে ধানে চিটা হয়েছে। অত্যধিক গরম ও মাঝেমধ্যে ঠাণ্ডা হওয়ায় এমনটা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে হাওর পরিদর্শন করেছি। 
উপজেলার ১ নং লাখাই ইউনিয়নের স্বজনগ্রামের  হাওর, রুহিতনসী হাওর,  শিবপুর হাওর, রাজনগরের হাওর, আঠারোকাইল্লা হাওর, ভোগার হাওর ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, হাওরের কৃষকেরা সব সময়ই অকাল বন্যার আতঙ্কে থাকেন। এ কারণে কৃষকেরা সাধারণত আগাম জাতের ধানের দিকে ঝুঁকে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের সামনে কয়েকটি দেশীয় জাতের ধান রয়েছে। কিন্তু এসব জাতের ধানের ফলন তুলনামূলক কম হয়। এ কারণে কৃষকেরা উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করে থাকেন। কিন্তু উচ্চফলনশীল জাতের বেশির ভাগ ধানই দেরিতে ঘরে ওঠে। তবে তুলনামূলকভাবে আগে উঠে ব্রি-২৮ ধান। ফলে উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে ব্রি-২৮-ই বেশি জনপ্রিয়। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা এই জাতের ধান চাষ করে যেমন ভালো ফলন পেয়ে আসছেন, তেমনি আগাম ঘরেও তুলতে পারছেন।  এবার অনেক কৃষকের ক্ষেতে এই জাতের ধান চিটা হয়ে যাওয়ায়  দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ।  জমির সোনালি ফসল দেখে আনন্দিত অনেক কৃষক । তবে যেসব কৃষকের ক্ষেতের ধানে চিটা দেখা দিয়েছে, তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
উপজেলার স্বজনগ্রাম হাওরের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রি-২৮ ধান চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পেকে যায়। কের প্রতি ১৫-২০ মণ ধান পাওয়া যায়। স্বজনগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফিরোজ মিয়া জানান, ৩ কের ( ৭৫ শতাংশ)  জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলাম। আশানুরূপ ফলন হলে ৫০/৬০ মণ ধান পেতাম, কিন্তু চিটা হওয়ায় ১ মণ ও ধান পাবো না। জমির খরচের টাকাই পাবো না। পরিবার পরিজন নিয়ে কীভাবে চলবো। হাবিবুর রহমান নামে একজন কৃষক জানান, স্বজনগ্রামের হাওরে আমার ৪ কের জমির পুরোটাই চিটা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে  মনে হবে ধান পেকে গেছে । কিন্তু কাছে গিয়ে হাত দিয়ে ধরলে দেখা যায় ধানের মধ্যে চাল নেই। 
এ মৌসুমে  লাখাই উপজেলায় মোট ১১ হাজার ১৭৪ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ হয়েছে বলে  জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস । তন্মধ্যে হাওরে ৮ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।  এবছর ৫৭ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন  ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

 

 

 


এ জাতীয় আরো খবর