মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে ফেসবুকে কানাডা প্রবাসী সুব্রত কুমার দাসের স্ট্যাটাস

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্কঃ
image

সুব্রত কুমার দাস। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। বসবাস করেন টরোন্টো, অন্টারিওতে। সম্প্রতি তিনি  স্বস্তিকা চিহ্ন সম্বলিত পাঞ্জাবি পরিধান করে ফেসবুকে পেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন এই চিহ্নটি মূলত  হিন্দুদের মঙ্গল ও চেতনার প্রতীক। কিন্তু এই প্রতীকটির ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে অনেকের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর নিরসনে তিনি তার লিখনিতে চিহ্নটি নিয়ে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।
ফেসবুকে পেইজে তিনি লিখেন, যদি নাজি আমলের জার্মান পতাকার কথা আপনার খেয়াল থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তাতে ব্যবহৃত চিহ্নটি আপনার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। যেখানে রয়েছে ডান দিকে বেঁকে যাওয়া দুটি বাহুর একটি ক্রস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই জার্মানিতে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে এই প্রতীকটির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ইতিহাসে কুখ্যাত হিটলারের কারণে। যদিও মজার বিষয় হলো, ওই প্রতীকটির উৎস পাওয়া যাবে হিন্দু সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাসে। হিন্দুদের সকল পূজা অর্জনায় যে মঙ্গল ঘট  কিংবা কলাগাছ ব্যবহৃত হয় তাতে এই  চিহ্নটি যা ‘স্বস্তিকা’ নামে পরিচিত তার ব্যবহার আবশ্যিক। কোন গ্রামীণ হিন্দু বাড়ি কি আছে যে বাড়ির একটি খুটি, পিলার বা দেয়ালের একাংশে একটি স্বস্তিকা চিহ্ন নেই ? জানা মতে পৃথিবীর প্রাচীনতম এই প্রতীকটি শতকোটি হিন্দু জনগোষ্ঠীর এক প্রিয় চিহ্ন।
তিনি লিখেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভুত শব্দ স্বস্তিকা’র অর্থ শান্তি, সৌভাগ্য বা মঙ্গল। এমন অর্থ নিয়ে শব্দটি প্রথম হরিবংশে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। বাংলাতে তা ‘স্বস্তিক’ বলেও পরিচিত। তবে স্থান ও কাল ভেদে প্রতীকটির ব্যবহারে বহু হেরফের ঘটেছে তাতে সন্দেহ নেই। হিন্দু ধর্মে প্রতীকটির দুটি ব্যবহার পাওয়া যায় পূরাণসমূহে। ব্রহ্মার দুই রূপ এতে বিরাজমান। ডানদিকে ঘূর্ণায়মানটি ব্রহ্মার সৃষ্টিরূপ আর বাঁ দিকে হলে তা ধ্বংসরূপকে প্রকাশ করে। বিষ্ণুর ১০৮টি প্রতীকের মধ্যেও স্বস্তিকা একটি। ভবিষ্য পূরাণে স্বস্তিকা স্বর্পরাজ তক্ষকের অস্ত্র হিসেবে উল্লিখিত।
হাজার হাজার বছরের পূরনো এই প্রতীকটি জীবন, সূর্য, শক্তি, সৌভাগ্য প্রতীক হিসাবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুগে গৃহীত হয়েছিল। মৌর্যযুগে বৌদ্ধদের মধ্যে স্বস্তিকার জনপ্রিয়তা তৈরী হয়। পরবর্তী কালে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের বিলুপ্তিরকালে ধর্মটি যখন চীন ও তিব্বতের বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে, প্রতীকটির প্রসার ঘটে পূর্ব এশিয় দেশগুলোতে। যে সকল ভিন্ন নাম এ প্রতীকটির কপালে জুটেছিল তা হলো ওয়ান (চিন), ফিলকট (ইংল্যান্ড), হ্যাকেনক্রনজ (জার্মানি), টেট্রাকেলিয়ান (গ্রিস) ইত্যাদি।
তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে জার্মানির এক পুরাতত্ত্ববিদ প্রাচীন ট্রয়ের এক খননকার্য কালে যখন একটি প্রতীকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। যার সাথে জার্মানিতে প্রাপ্ত প্রাচীনকালে ব্যবহৃত তৈযজপত্রে চিত্রিত অনুরূপ প্রতীকটি সাজুয্য বিদ্যমান ছিল। পরে তিনি ঘোষণা দিলেন এটি প্রকৃতপক্ষে জার্মানদের পূর্বপুরুষদের আদি ধর্মের ব্যবহৃত চিহ্ন। তখনই বিপত্তিটা শুরু হলো। আর্যরা জার্মান অঞ্চল থেকে ভারতে এসেছিল এবং তাদেরই প্রতীক ছিল স্বস্তিকা। এই ভাবনা ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মান সংস্কৃত পণ্ডিত এমিল বুর্নফেরও ।
বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে স্বস্তিকা জার্মান নাজি পার্টির প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। পার্টির পতাকা ব্যাজ এবং বাজুবন্ধেও স্বস্তিকা নিজ নামে ব্যবহৃত হয়। ১৯২৫ সালে মেইন কাম্প গ্রন্থে এডলফ হিটলার পার্টির পতাকায় স্বস্তিকা ব্যবহারে ইতিবৃত্ত উল্লেখ করা হয়েছে। আর্য উত্তরাধিকার হিসাবে জার্মানিদের দাবীও প্রকৃতপক্ষে হিটলার তাঁর এ সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন। তবে এই প্রতীকের ছায়াতলে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করার যে ইতিহাস হিটলার তৈরী করেছেন তা স্বস্তিকাকে হত্যা ও ধ্বংসের প্রতীক হিসেবেও পৃথিবী জুড়ে উপস্থাপিত করেছে। কিন্তু সে সকল অপব্যবহারের পরও স্বস্তিকা বাঙালির, বাঙালি হিন্দুর মঙ্গল ও চেতনার প্রতীক।


এ জাতীয় আরো খবর