বুধবার, মে ৮, ২০২৪

ডোলমা খাং চূড়ায় বাংলাদেশি মেয়ে, দিলেন যুদ্ধ বিরোধী বার্তা

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্ক :
image

ডোলমা খাং, (কাঠমান্ডু), ০৮ নভেম্বর : বাংলাদেশের গর্ব শায়লা বিথী। ডোলমা খাং চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন যুদ্ধ বিরোধী বার্তা। তাঁর কীর্তিতে গর্বিত বাংলাদেশ তথা বাঙালি। শায়লা বিথী প্রথম বাংলাদেশী নারী, যিনি ডোলমা খাং চূড়ায় পৌঁছেছেন। ছোট থেকে তার চেনা ছবি ছিল নদী, অথচ স্বপ্ন হল পাহাড়। শুরুর জার্নি বেশ কঠিন। বাড়ি থেকে সব সময় কথা শুনতে হত। রাস্তায় বেরোলে পথ চলতি মানুষের চোখে ছিল হাজারো প্রশ্ন। এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে একের পর এক পাহাড়ের চূড়া জয় করছেন শায়লা বিথী।

এই প্রথম কোন বাংলাদেশী নারী এই দুর্গম-পর্বত চূড়ায় পৌঁছালেন। হিমালয়ের ৬৩৩২ মিটার উঁচু পর্বত চূড়ায় পৌঁছানোর পথ একেবারেই সোজা ছিল না। ডোলমা খাং পর্বত শিখরটি রয়েছে নেপালের রোল ওয়ালিং উপত্যকার গৌরী শংকর হিমালয় রেঞ্জে। ডোলমা খাংয়ের চূড়ায় বিথী পৌঁছেছেন ৫ই নভেম্বর শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। পাহাড় থেকে নেমে এসেছেন ৬ই নভেম্বর রবিবার। তারপর তিনি নিজেই সেই সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। অভিযানের শিরোনাম ” দ্য ডোলমা খাং চ্যালেঞ্জ: ফিচার শায়লা বিথী অ্যান্ড জেডএম অ্যাকুয়া বোম্ব”।
২৯শে অক্টোবর অভিযানের উদ্দেশ্যে তিনি ঢাকা থেকে বিমানে করে নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ৩১শে অক্টোবর কাঠমান্ডু থেকে ডোলমা খাংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। চেট চেট নামক এলাকা থেকে ট্রেকিং শুরু হয়। তার সাথে ছিল একজন স্থানীয় শেরপা। প্রথম দিন প্রায় তিন ঘন্টা ট্রেকিংয়ের পর পৌঁছান সিমিগাঁও গ্রামে। তারপরের দিন সকালে আবার ট্রেকিং করে পৌঁছান ডংগাং গ্রামে। তারপর বেদিং গ্রাম হয়ে ৫ই নভেম্বর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পৌঁছান ডোলমা খাংয়ের চূড়ায়। সঙ্গে ছিল যুদ্ধবিরোধী বার্তা সম্মিলিত প্ল্যাকার্ড। তিনি সেটি পর্বত শিখরে রেখে ছবি তুলেছেন। যা পরবর্তীকালে ব্যবহার করবেন যুদ্ধ বিরোধী প্রচারে।
শায়লা বিথীর এই যাত্রা পথ একেবারেই সহজ ছিল না। ডোলমা খাংয়ের চূড়ার দিকের অংশ অত্যন্ত দুর্গম। এখানে খুব একটা অভিযান হয়নি। এর শীর্ষে আরোহন করা বেশ কঠিন। পৌঁছাতে গেলে পেরোতে হয় অনেকখানি খাড়াই পথ। চূড়ায় পৌঁছানোর ঠিক আগেই রয়েছে একটি রিজ লাইন, যা অত্যন্ত সরু এবং ভয়ঙ্কর বিপদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। একটু ভুলেই ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। নদীর দেশের মেয়ের কাছে এই পাহাড়ি পথ জয় করা কি আদৌ সহজ ছিল? নদীর ধারে মেয়ে কীভাবে পাহাড়ের মেয়ে হয়ে উঠলো? ছোটবেলায় পাহাড়ে চড়ার স্বপ্ন ছিল না।
বড় হয়েছেন প্রচুর নদী দেখে, তার কাছে নদী ছিল চেনা ছবি। টিভিতে এবং বইতে পড়ে প্রথম পাহাড় চেনা। তারপর ২০১৪ সালে বদলে গেল স্বপ্ন। বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন সীতাকুণ্ড পাহাড়ে। জীবনে সেই প্রথম কাছ থেকে পাহাড় দেখা। সেখানে সাক্ষাৎ হয় এম এ মুহিতের সঙ্গে। বাংলাদেশের মাউনটেনিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ক্লাবে পর্বাতারোহী মানুষদের সঙ্গে বিথী কথা বলেন।
সেই সব গল্প শুনতে শুনতে ভালবেসে ফেলেন পাহাড়কে। ২০১৫ সালে প্রথম নেপাল যাওয়ার সুযোগ হয়। সেই অভিজ্ঞতার পরই তিনি পাহাড়ের প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু পাহাড়ে চড়ার বিষয়টি সমাজের বহু মানুষ মেনে নেয়নি। প্রথম দিকে পরিবারের তরফ মেলেনি কোন সাপোর্ট। যখন প্রথম নেপালে যান তখন শুধু মাকে বলে গিয়েছিলেন।
প্রথম দিকে পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে প্রচুর কথা শুনতে হত। তবে এখন সেই চিত্র বদলেছে। বাবা-মা তাকে সাপোর্ট করে। বন্ধু ভাই-বোনদের কাছ থেকে পান প্রচুর উৎসাহ। কিন্তু সমস্যা হল সমাজে, সকালে দৌড়াতে বেরোলে দারোয়ানের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পথ চলতি মানুষের চোখে থাকে হাজারো প্রশ্ন। যদিও এসব নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। তার স্বপ্নের কাছে এসব বাধা অত্যন্ত তুচ্ছ।
এই মেয়েকে অসামান্য বললে খুব একটা ভুল হবে না । অভিজ্ঞতা ঝুলতে রয়েছে প্রায় নয়টি পর্বত অভিযানের রেকর্ড। গত বছরের অক্টোবর হিমালয়ের ৬,১৮৯ মিটার (মতান্তরে ৬, ১৬০) উঁচু আইল্যান্ড শিখর জয় করেছেন। এই অভিযানে তিনি আইল্যান্ড শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। এছাড়াও ছিল ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এবং পরিবেশ রক্ষায় নানান বার্তা সংবলিত প্ল্যাকার্ড।
২০১৬ সালে তিনি ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টিনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহনের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি ছিলেন প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি ২০১৮ সালে তিব্বতের লাকপারি পর্বত চূড়া জয় করেন। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশের নারী হিসেবে পার হন হিমালয়ের দুর্গম তাশিলাপচা গিরিপথ। ২০২১ সালে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে অতিক্রম করেন হিমালয়ের বিখ্যাত থ্রি-পাস।


এ জাতীয় আরো খবর