মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

মানুষখেকো বাঘের আজীবন কারাদণ্ড

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্কঃ
image

কলকাতা : ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা মানুষখেকো বাঘ পাঁচ বছরের ‘শরণ’কে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল। গত শনিবার বাঘটিকে  ‘কানহা টাইগার রিজার্ভ’ থেকে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বনবিহার ন্যাশনাল পার্কে  নিয়ে এসে কোয়ারেন্টাইনে  রাখা হয়েছে। আর সামাজিক মাধ্যমে বাঘটির ছবি প্রকাশের পর নেটদুনিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে বলে খবর দিয়েছে দৈনিক যুগশঙ্খ। 
বনবিভাগের  কর্তারা জানান, বাঘটিকে এই শাস্তি দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। বাঘটি ইতিমধ্যেই দু’জন মানুষ মেরেছে। প্রথমবার মানুষ মারার পর বাঘটিকে জঙ্গলে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বভাবে বদল আসেনি। আবার সে লোকালয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়েই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হল। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও বন্যপ্রাণ প্রেমী বুদ্ধদেব গুহ অবশ্য বলেন, ‘বাঘের এই শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সামিল।’
কানহা রিজার্ভ ফরেস্টের অধিকর্তা এল.কৃষ্ণমূর্তি জানিয়েছেন, ‘ বাঘটি চন্দ্রপুরা থেকে সারনি যাওয়ার পথে ২ জন মানুষকে মারে। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলায় এই ঘটনা ঘটে ২০১৮র অক্টোবর মাসে। মহারাষ্ট্র সরকার বাঘটিকে ধরার নির্দেশ দেন। সারনির থার্মাল প্ল্যান্টের কাছ বেতুল থেকে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর বাঘটিকে ধরা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা বাঘটিকে ধরার পর কিছুদিন কানহা রিজার্ভ ফরেস্টে রাখি। এরপর আমরা বাঘটিকে স্বাভাবিক বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সাতপুরা টাইগার রিজার্ভে ছেড়ে দিই। কিন্তু আবার সেই ডোরাকাটা লোকালয়ে চলে আসে। ২০১৯ এর ১০ ফেব্রুয়ারি বাঘটিকে সারনির জনবসতি এলাকা থেকে ধরা হয় এবং কানহা টাইগার রিজার্ভের এনক্লোজারে রাখা হয়। বাঘটিকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বনবিহার ন্যাশনাল পার্কে পাঠানো হলো।’
ভোপালের বনবিহার ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে যাওয়ার আগে ঘুম পাড়ানি গুলি করে বাঘটিকে ঘুম পাড়ানো হয়। বনবিহারের সহ অধিকর্তা এ.কে. জৈনের নেতৃত্বে চিকিৎসক ও অন্যান্য আধিকারিকদের একটি দল বাঘটিকে নিয়ে যান। বনবিহার টাইগার রিজার্ভের পশু চিকিৎসক ডা. অতুল গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘বাঘটিকে এখন নিয়ম অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাঘটি সুস্থ রয়েছে।’  মধ্যপ্রদেশের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন এস.কে. মণ্ডল বলেন, ‘ আমরা বাঘটিকে বন্য পরিবেশে ফিরে যাওয়ার একাধিক সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বারবার লোকালয়ে ফিরে গিয়েছে। ওকে বন্দি রাখাই মানুষ ও বাঘটির পক্ষে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায়।’
বনবিহার ন্যাশনাল পার্কের অধিকর্তা কমলিকা মহান্ত বলেন, ‘ এখন বাঘটিকে পুরোপুরি একা রাখা হবে। নতুন পরিবেশে ওর মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা ওর আচার আচরণের উপর নজর রাখবো। ওকে চিড়িয়াখানা বা ঘেরা সাফারি পার্কে পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কিন্ত বিশিষ্ট সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ বাঘটির এই পরিণতিতে খুবই দুঃখিত। তিনি বলেন, ‘এই শাস্তি ওর কাছে মৃত্যুর সামিল। বাঘ একরাতে ১৩ থেকে ১৪ মাইল হাঁটে। সেখানে খাঁচা বন্দি জীবন ! হয়তো ওর ‘ক্যানিয়ান টিথ’ বা শরীরের অন্য কোথাও পুরনো ছোট থাকতে পারে। তাই সহজ শিকারের জন্য মানুষ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছিল। যাইহোক খুব খারাপ লাগছে,,, চৈত্রের অরণ্যে যখন বুনো ফুল ওড়াওড়ি করবে ওর মন উচাটন হবে না!

 


এ জাতীয় আরো খবর