মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

ফিরে দেখা- এরশাদের বিদায় : মুক্তি আর কত দূর?

  • লিয়াকত আলী খান :
image

জেনারেল এরশাদ অবশেষে (০৬ ডিসেম্বর ’৯০) ক্ষমতা হস্তান্তর করিয়া বিদায় নিলেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি জোট সমর্থিত প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৃশ্যমান বিজয় হইয়াছে। ১০ দিন বন্ধ থাকার পর সংবাদপত্রসমূহের প্রকাশনাও শুরু হইয়াছে। দেশব্যাপী জনতার আনন্দ মিছিলে মনে হইতেছে আবারো স্বাধীনতা পাওয়া গিয়াছে। ক্ষমতা থেকে জেনারেল এরশাদের বিদায়ে দেশ ও জাতির কল্যাণকামী সচেতন নাগরিকদের মনে আশার সঞ্চার হইয়াছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অভিনন্দন হোসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। এই মুহূর্তের কথা : সাহসিকতার পরীক্ষায় জাতি আবারও উত্তীর্ণ হইল। হতাশাগ্রস্ত জাতির মাঝে প্রত্যাশা আবারো জাগ্রত হইল। এখন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতে হইবে। এই জন্য প্রয়োজন সকলের সহনশীল মনেবৃত্তি এবং দূরদর্শীতা প্রদর্শন। কেন না, হতাশাগ্রস্ত জাতি নতুন করে আবারো আশাবাদী হইয়াছে- সুতরাং, প্রত্যাশার প্রদীপ অন্ধকারে যেন তলাইয়া না যায়। সেই বিষয়ে রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়া দেশকে আগাইয়া নিতে বা সুন্দর আগামীর ভিত রচনা করিতে বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকিতে হইবে। 

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তিরসহ সুন্দর আগামীর সূচনা করিতে হইলে সবাইকে স্মরণ রাখিতে হইবে নিকট অতীতের কথা। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে গিয়া যেই জাতি স্বাধীনতা আনিয়াছে দুইবার। দুই দুইবারের স্বাধীনতা অর্জনে জাতিকে মূল্যও দিতে হইয়াছে অনেক। প্রথমবার স্বাধীনতা পাইয়াও শোষণ-বঞ্চনার ঝাঁতাকলে পৃষ্ঠ হইয়া জাতি ছিল দিশাহারা। দ্বিতীয়বারের স্বাধীনতা অর্জনে ত্রিশলক্ষাধিক তাজাপ্রাণের রক্তগঙ্গা আর কয়েক লক্ষাধিক মা-বোনের বিসর্জন দেওয়া সতীত্ব-সম্ভ্রম জাতির প্রত্যাশা পুরণের বদলে দেশ পরিণত হইয়াছে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে! দ্বিতীয়বারের স্বাধীনতার ১৯ বৎসরেও কাক্সিক্ষত মুক্তি আসে নাই। ক্ষমতা থেকে জেনারেল এরশাদ বিদায় নিলেও জানিনা মুক্তি আর কত দূর? জাতীয় কবি নজরুল তাঁর এক কবিতায় বলিয়াছিলেন, ‘...পাষাণ হইয়া পড়িয়া আছো আজ হায়রে আত্ম-ভোলা- তোমরা জাগিলে সারা পৃথিবীতে উঠিবে প্রবল দোলা! একাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাগিয়া উঠিলে প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক বজ্রশিলা বৃষ্টির ন্যায় নিক্ষিপ্ত বুলেট-বোমা নিরস্ত্র বাঙালি অকাতরে বুক পাতিয়া রুখিয়া দেওয়ায় বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নিয়াছিল ‘লাল-সবুজ’ পতাকাবাহী আজকের এই বাংলাদেশ। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এক কবিতায় বলিয়াছিলেন- ‘সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী- রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’! সত্যি তো! ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সেই পদ্যপংক্তি আবারো প্রমাণিত হইল! বাঙালি যদি মানুষ হইতো তাহা হইলে ১৫ই আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকারীদের পাকড়াও করিবার জন্য দলমত নির্বিশেষে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়া বাঙালি রাস্তায় নামিয়া পড়িত। দেশ ও জাতির ললাটে বিশ্বের মুক্তিকামী সচেতন নাগরিকদের দেওয়া ‘বিশ্বাঘাতক’ কলঙ্ক কালিমা লাগিতনা। ১৫ই আগস্ট কালোরাত্রিতে নারী-শিশুসহ সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবেহত্যা করায় বিশ্বের মুক্তিকামী নিপীড়িত মানুষদের কাছে ‘বাঙালি বিশ্বাসঘাতক জাতি’ বলিয়া চিহ্নিত হইয়াছে! যাহা প্রকৃত কৃতজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষের দৃষ্টিতে অযৌক্তিক নহে। খুনীরা যে কলঙ্কের দাগ লাগাইয়াছে- তাহা কেয়ামত পর্যন্ত মুছা যাইবে বলিয়া মনে হয় না। তবে চেষ্টা করিতে হইবে, দেশ ও জাতির ললাটে লাগা ‘বিশ্বাসঘাতক’ শব্দের কলঙ্কের কালিমা চুনকাম করিয়া ঢাকিবার। এই জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাঝোতা। তাহা না হইলে রক্ত-জীবনসহ আরো অনেক মূল্য দিতে হইবে ‘মানুষ’ না হওয়া এই জাতিকে- যাহা দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক হিসাবে আমার কাম্য নহে। 

স্বাধীনতা উত্তরকাল হইতে আজ অবধি সেলিম-দেলওয়ার, ময়েজ উদ্দিন আর নূর হোসেন ও ডাক্তার মিলনসহ গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন-সংগ্রাম করিতে গিয়া অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষাসহ জাতির অগনন আত্মবলিদানকে রাজনীতিবিদদের সবকিছু ঊর্ধ্বে স্থান দিয়া মূল্যায়ণ করিতে হইবে। হিংসার রাজনীতি যে সুফল দেয় নাই- এই বিষয়টি মাথায় রাখিয়া সামনে আগাইতে রাজনীতিবিদদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক হইতে হইবে। সবাইকে মনে রাখিতে হইবে যে, ইতিহাস ‘রাজহাঁস-পাতিহাঁস’ নয় যে- ক্ষমতাসীনরা যেইভাবে চাহিবে দেশ সেইভাবেই চলিবে! বিস্ময়কর হইলেও সত্য যে, আমাদের পরে স্বাধীনতা পাইয়া দক্ষিণ কোরিয়া-মালয়েশিয়া উন্নত বিশ্বের কাতারে চলিয়া যাইতেছে। আর আমরা সপরিবারে ‘জাতির পিতা’ হত্যাকান্ডের বিচার করা যাইবে না বলিয়া কুখ্যাত ‘ইন্ডেমনিটি অর্ডিনেন্স’ সংবিধানে সংযোজন করিয়া হিংসার রাজনীতি চালু রাখিয়া দেশকে উন্নত বিশ্বের করুণারপাত্র করিয়া রাখিয়াছি! ফলে, বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করিয়া এবং ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর ঘটনাচক্রে রাষ্ট্রপতি হইয়া বহুল আলোচিত জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরোত্তমকে ক্ষমতায় থাকাবস্থায়ই নৃশংসভাবে শাহাদাৎ বরণ করিতে হইয়াছে।

গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক তথা জাতীয় মুক্তির স্বার্থে এই মুহূর্তে অতীত নিয়া বেশি না হাতরাইয়া নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর আগামীর ভিত রচনা করিতে হইবে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখিতে হইবে- স্বাধীনতা উত্তরকাল হইতে প্রায় ১৬ বৎসর সামরিক শাসকরা জগদ্দল পাথরের মত দেশ ও জাতির ওপর চাপিয়া বসিয়াছিল। বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন চাপা পড়িয়া গিয়াছিল লৌহযবনিকার অন্তরালে! ফলে এই দেশের জাতীয় অর্থনীতির মেরুদন্ড পঙ্গুপ্রায়। আমার মতে লৌহযবনিকার অন্তরাল হইতে জাতিকে ‘মুক্তির মোহনায়’ নিয়া আসা সম্ভব- রাজনীতিবিদরা জনগণের কল্যাণকামী হইলে! তাই ক্ষমতা নিয়া কাড়কাড়ি না করিয়া একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ আর ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্যে পৌঁছাইবেন- ইহাই এখন চাওয়া। আমার সাফ কথা; আর ভুল করিলে চলিবে না- রাজনীতিবিদদের মনে রাখিতে হইবে ‘ব্লাড ইজ নট ওয়াটার’! উপলব্ধি করিতে হইবে, ‘মুক্তির জন্যই মৃত্যু’ তথা রক্ত-জীবন আর সতীত্ব-সম্ভ্রম বিসর্জন দেওয়া হইয়াছে।

চরম সত্য কথা! সঠিক কর্মসূচী আর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব থাকায় ১৯৭১-এ জাতি মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হইয়াছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংস্তুপের ওপর দাঁড়াইয়া সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি ভঙ্গুর দেশকে উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যা-খরা মোকাবেলা করিয়া গড়িয়া তুলিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করিয়াছিলেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর। কিন্তু প্রতিবিপ্লবীরা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির গোপন মদদে তাহা সফল হইতে দেয় নাই- সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবেহত্যা করিয়া পাল্টাইয়া দেওয়া হইয়াছে স্বাধীনতার তথা মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা। ৭৫ পরবর্তী নেতৃত্বের অদূরদর্শীতার কারণে বার বার পটপরিবর্ত ঘটিয়াছে ক্ষমতা ও রাজনীতির। সেই হইতে আজ অবধি জাতি চরম হতায় নিমজ্জিত। সঠিক নেতৃত্ব আর কর্মসূচী পাইলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানুষ না হওয়া বাঙালিরা যে, সহজেই ঐক্যবদ্ধ হয়- আর ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলনের মাধ্যমেই যে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব, এই চরম সত্যটুকু একাত্তরের মত ০৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ আবারো প্রমাণিত হইল। জানিনা এই প্রাপ্তি জাতির প্রত্যাশাকে পদদলিত করে হতাশার অন্ধকারে আবারও তলাইয়া যায় কিনা!

জনগণ আর বিভ্রান্তি ও হিংসার রাজনীতি দেখিতে চাহে না- চাহে সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে চলার জনকল্যাণমুখী অহিংস রাজনীতি। অমানিশার কৃৃষ্ণবুক ছিঁড়িয়া জাতির মানসপটে আজ যে মুক্তির প্রত্যাশা জাগ্রত হইয়াছে- তাহা আগামীর ক্ষমতাসীনদের পদদলিত করা যাইবে না। অধিকার সচেতন দেশবাসী চায়- রাজনীতিবিদদের চিন্তায় ও মননে সত্যিকারের দেশপ্রেম জাগ্রত হউক। কায়েম হউক দেশে প্রকৃৃত গণতন্ত্র আর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতিমুক্ত স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং অর্থনৈতিক মুক্তি। এক্ষণে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হইয়া যেই বিষয়টা জাতির সামনে উপস্থিত- তাহা হইল স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ-এর ঘটনাবহুল রাজনীতির মূল্যায়ণ কীভাবে সম্ভব হইবে(!)? সংকীর্ণতার কাছে বিষয়টা জটিল হইলেও রাজনীতিবিদরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক বিশেষ করিয়া উদার মনমানসিকতা নিয়া বৃহত্তর কল্যাণকামী হইলে মিমাংসায় পৌঁছাইতে কোনই বেগ পাইতে হইবে না। মনে রাখিতে হইবে, এই দেশ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন- ভারত-পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য নহে। সুতরাং, গণতন্ত্র আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদদের সমঝোতায় আসিতেই হইবে।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলিয়া যেমন কিছু নাই- তেমনই দুই হইতে তিন বিয়োগ করা যায় না। বরং দুইয়ে+তিনে=পাঁচ যোগফল করিয়া দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে আগাইয়া নেওয়ার ‘পজেটিভ রাজনৈতিক সংস্কৃৃতি’ চালু করিতে হইবে- বন্ধ করিতে হইবে ক্ষমতায় যাইবার আর ক্ষমতা আঁকড়াইয়া রাখার চালু থাকা ‘রাজনৈতিক দুর্নীতি’! অবশ্য স্বাধীনতা উত্তরকালের অপরাজনীতি আর ক্ষমতা দখল-পাল্টা দখলের অর্থনীতি বিধ্বংসী অপতৎপরতা তথা হরতাল-জালাও-পোড়াও নীতি পরিহার করিতে হইবে। প্রতিস্থাপন করিতে হইবে স্বাধীনতা আন্দোলনের মুল স্থপতিসহ জাতির যাবতীয় অর্জনসমূহ যথাযথভাবে। সবাইকে মনে রাখিতে হইবে- গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যপথে পৌঁছাইতে হইলে, স্বাধীনতার তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃৃত চেতনা যাহাতে অক্ষুণœ থাকে। নতুবা জাতির মনে জাগিয়া উঠা প্রত্যাশা আবারো হতাশার অন্ধকারে তলাইয়া যাইবে। 

জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে রাজনৈতিক জটিলতা থাকিলেও গণতন্ত্রের ও অর্থনৈতিক মুক্তির তথা বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টা হয় সার্বভৌম পার্লমেন্টে নতুবা গণভোটের মাধ্যমে মিমাংসায় আসা যাইতে পারে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন (অর্থাৎ নির্বাচনকালে কমিশন যাহাতে মন্ত্রী-এমপিসহ যে কাউকে বরখাস্তের ক্ষমতা প্রাপ্ত হইবে) করিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে একটি অর্ডিনেন্স জারী করা- তিনি চাহিলে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাবলে তাহা আজই করিতে পারেন। কেন না, এই অর্ডিনেন্স বৃহত্তর কল্যাণে- যাহা রাজনীতিবিদরাও স্বীয় স্বার্থে মানিয়া নিয়া আগামী পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে পাস করিয়া নিবেন। অর্ডিনেন্সে উল্লেখ রাখা আবশ্যক যে, নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার না করার বাধ্যতামূলক কিছু নিয়ম-কানুন! উল্লেখ থাকিতে হইবে, সব প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় খরচে একমে  ‘জনতার মুখোমুখী’ করার এবং কিছু ব্যানার-ফেস্টুন ছাড়া কোন পোস্টারিং করা চলিবে না। অবশ্য প্রার্থীরা নিজ নিজ বক্তব্য সম্বলিত প্রচারপত্র ভোটারের বাসা-বাড়িসহ নির্বাচনী সমাবেশ ও পথসভায় যতখুশী বিতরণ করিতে পারিবেন। 

আমাদের স্বাধীনতা যে কাহারো ‘দয়ার দানে পাওয়া নয়- রক্তের দামে কিনিতে হইয়াছে’- নতুন প্রজন্মকে জানাইতে পাঠ্যতালিকায় তাহা বাধ্যতামুলকভাবে রাখিতে হইবে। কেননা ‘স্বাধীনতা’ অর্জনের চাইতে তাহা রক্ষা করা কঠিন- তাই আমি মনেকরি, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের আত্মত্যাগের তথ্যচিত্র নতুন প্রজন্ম জানার অধিকার রাখে। সেই অধিকার যাহাতে নতুন প্র্রজন্ম পাইতে পারে- তাহা নিশ্চিত করাও রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব ও অপরিহার্য্য কর্তব্য। নতুন প্রজন্মকেও মনে রাখিতে হইবে নিকট অতীতে নেতারা কৌশল করিয়া যেইভাবে নিজেদের আখের গোচাইবার চেষ্টা করিয়াছে- এই সুযোগ যেন তাহারা আর না পায়। অচলায়তনের লৌহযবনিকার অন্তরাল থেকে জতিকে ‘মুক্তির মোহনায়’ নিয়া আসিতে একাত্তরের ন্যায় অরুণপাতের তরুণদেরও ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে। কেন না, ‘অধিকার কেউ কাউকে দিয়ে দেয় না- আদায় করিয়া নিতে হয়’। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন ছিল জাতির অধিকার- ঠিক তেমনই গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি পাওয়াও জাতির অধিকার। ০৬.১২.১৯৯০।
===========================

লিয়াকত আলী খান
(সাংবাদিক-কলামিস্ট ও পরিবর্তনের প্রবাক্তা)
(সিলেট-১ নির্বাচনী এলাকার দু’বারের
সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী-৯১-৯৬
এবং সাবেক প্রধান সম্পাদক 
জাতীয় দৈনিক ‘পুনরুত্থান’ ঢাকা।


এ জাতীয় আরো খবর