মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

লন্ডনে জিএসসি সাউথইষ্টের মাতৃভাষা দিবস পালন

  • এ রহমান অলি :
image

লন্ডন, ২৭ ফেব্রুয়ারি : গ্রেটার সিলেট ডেভেলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে সাউথইষ্ট রিজিয়নের উদ্যোগে গত বুধবার (২২ফেব্রুয়ারী) পূর্ব লন্ডনস্থ জিএসসি’র কেন্দ্রীয় অফিসে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জিএসসি সাউথইষ্ট রিজিয়নের সভাপতি আব্দুল  আজিজের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক ফজলুল করিম চৌধূরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিএসসি  কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিষ্টার আতাউর রহমান। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সাউথইষ্ট রিজিয়নের কার্য্যকরি কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর আহবাব মিয়া। স্বাগত বক্তব্যে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সভার সভাপতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তোলে ধরে আলোচনার সূত্রপাত করেন‌। সভায় বাংলাকে জাতিসঙ্গের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবী করা হয়।
সভায় বক্তাগণ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বিশ্বের মাঝে বাঙ্গালীরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছে। ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে রফিক, শফিক,  বরকত, সালাম, জব্বার সহ অসংখ্য দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে বাংলার দামাল ছেলেদের নজিরবিহীন আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসাবে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ একুশে ফেব্রুয়ারীকে মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করে যাচ্ছে। এবিজয় সকল ভাষা শহীদ ও সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়কে সুসংহত করতে হলে রাষ্ট্রীয় সকল কার্য্যে বাংলা ভাষার প্রচলন বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো হয়। 
সাধারন সম্পাদক বাংলা ভাষার পরিসংখানের উপর আলোকপাত করেন। বাংলা ভাষা পৃথিবীর অত্যন্ত মধুর ভাষার মধ্যে একটি। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ মিলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলতে পারে। জনসংখ্যার হিসেবে বাংলা বিশ্বের সপ্তম ও মাতৃভাষার জনগোষ্ঠীর হিসাবে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ক্রমিক বিচারে এর অবস্থান সারা বিশ্বের ভাষাগুলোর মধ্যে পঞ্চম। বর্তমানে জাতিসংঘে মোট ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে। ইংরেজি, চাইনিজ মান্দারিন, রুশ,স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও আরবি। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র সেই গর্বিত জাতি যারা নিজের ভাষার জন্য জীবন  দিয়েছি। বক্তারা যুক্তিসংগত কারনেই বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবী জানান বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে।
বক্তারা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যুগের পর যুগ বাংলায় কথা বলার প্রচলন অব্যাহত রাখতে হলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিলাতে জন্ম নেওয়া ও বেরেউঠা নবীন প্রজন্মের সাথে আমাদেরকে বাংলা ভাষায় কথা বলার অভ্যাস জারি রাখতে হবে। এমনকি বাংলায় কথা বলার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমনের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অবিভাবকগণের প্রতি আহ্বান জানান। একইসাথে  পিতামাতারা মেইনস্ট্রিম স্কুলে ছেলে মেয়েদেরকে বাংলা ভাষায় “জিসিএসি” এবং “এ” লেভেল সাবজেক্ট নিয়ে লেখাপড়া করার জন্য উৎসাহিত করার অনুরোধ করেন। এতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারবে এবং ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। বিলাতে বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদেরকে বাংলা সাপ্লেমেন্টারী শিক্ষা প্রদানের উদ্যেগ গ্রহন করার জন্য জিএসসি’র প্রতিটি ব্রাঞ্চ ও রিজিওনের নের্তৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাউথ ইস্ট রিজিওনের সহ সভাপতিদের মধ্যে এম এ গফুর, মাওলানা রফিক আহমদ রফিক, মোঃ আবুল কালাম, সাউথ ইস্ট রিজিওনের ট্রেজারার সুফী সুহেল আহমদ, ইস্ট লন্ডন শাখার সভাপতি আব্দুল মালিক কুটি, এসেক্স শাখার সহ সভাপতি সালেহ আহমদ চৌধুরী আলফু, প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি জামান আহম্মদ সিদ্দিকী, সাউথইষ্ট রিজিওনের মোঃ আবুল মিয়া, অ্যাডভোকেট মোমিন আলী, সালেহ আহম্মদ, ফারুখ মিয়া, আহবাব মিয়া, জগম্বর আলী, আরিফ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হাসান, আব্দুল কাদির জিলানী, আজম আলী, আব্দুল কাহির, আব্দুর রহমান ও এম এ মিয়া প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে ভাষা আন্দোলনে ও স্বাধীনতা সংগ্রেমে নিহত সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও জীবিত সকল ভাষা-সৈনিকদের ও মুক্তিযাদ্ধাদের দীর্ঘায়ূ কামনা করে দোয়া করা হয় । দোয়া পরিচালনা করেন সাউথ ইষ্ট রিজিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম চৌধুরী। পরিশেষে সকল মুসলিম উম্মাসহ জিএসসির সকল অসুস্থ নেতা কর্মী ও সদস্যগণের আশু সুস্থতা এবং সকল প্রয়াত নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণের জন্য দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।


এ জাতীয় আরো খবর