কিয়েভ, ২৭ ফেব্রুয়ারি : আজ রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধী দলকে (ডেটারেন্স ফোর্সেস) ‘হাই অ্যালার্ট’-এ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে চরম শত্রুতামূলক আচরণ করছে। চলমান সংকটে বেলারুশে আলোচনার জন্য ইউক্রেনকে ডেকেছিল রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিফোন আলাপে আলোচনায় সম্মতি জানান তিনি। এরপরই ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা বেলারুশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ সহযোগী ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেডিনস্কি নিশ্চিত করেছেন। খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রের।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঘিরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ‘আক্রমণাত্মক বিবৃতি’ এবং মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন তাঁর দেশের ‘ডেটারেন্স ফোর্সেস’-কে তৈরি থাকার নির্দেশ দেন। তার পরেই আশঙ্কা বেড়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয়। এমনকী ইউক্রেনও কালো মেঘ দেখছে। উদ্বেগ, এই বুঝি পরমাণু হামলা করে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কেন পরমাণু প্রতিরোধী দলকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, স্বভাবতই এই প্রশ্ন উঠছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সম্প্রতি ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন ‘সুইফট’ নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলোকে বাদ দেওয়া শুরু করেছে। ‘সুইফট’ থেকে বাদ যাওয়ার অর্থ হল, রাশিয়ার ব্যাঙ্কের পক্ষে বিদেশি লেনদেন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। পাশাপাশি রয়েছে পশ্চিমী দুনিয়ার দেশগুলোর চাপানো ধারাবাহিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। তা হলে যুদ্ধের খরচ উঠবে কী করে? পশ্চিমের দেশগুলোর এমন একতরফা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ মনে করেন, এজন্যই পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র সতর্ক অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ।
সে কারণে আর বেশি দেরি করতে চায়নি ইউক্রেন। হামলার পথে রাশিয়া যাতে না এগোয়, তাই তড়িঘড়ি আলোচনায় রাজি হয়েছে ইউক্রেন বলে মত বিশেষজ্ঞের।
যদিও এই বিষয়টি চিন্তা বাড়িয়েছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী রাষ্ট্রের। কারণ রাশিয়ার অনুগত রাষ্ট্র বেলারুশের সঙ্গে তাদের কারও তেমন সম্পর্ক ভালো নয়। এই অবস্থায় বেলারুশ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের উপর ন্যাটো বা পশ্চিমী দুনিয়ার তরফ থেকে হামলা হলে তারাও শত্রুদের ছেড়ে কথা বলবে না! এমনকী, প্রয়োজনে তারা যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতেও দু’বার ভাববে না, সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রুশ বাহিনীর হাত থেকে ফের শহর খারকিভ দখল করেছে ইউক্রেন। জানালেন খারকিভের গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ। খবর, একের পর এক রকেট হামলা চালিয়ে খারকিভে গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দেয় রুশ সেনা। কিভে তেল ভাণ্ডারেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সবেরই মাঝে খবর পাওয়া যায়, খারকিভের ভিতর ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। যদিও তাদের শেষ পর্যন্ত হঠিয়ে খারকিভ পুনর্দখল করে ইউক্রেন। ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, রাশিয়ার আক্রমণের মুখে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও রাজধানী কিয়েভ এখনো ইউক্রেন সরকারের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।