রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী স্বামী শিবানন্দ যোগশাস্ত্রে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হলেন

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্ক :
image

ছবি : সংগৃহীত

নয়াদিল্লি, ২৩ মার্চ : যোগশাস্ত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এর কাছ থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করলেন ১২৫ বছর বয়সী স্বামী শিবানন্দ। গত সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করেন। অনুষ্ঠানে চারজনকে পদ্মবিভূষণ, ১৭ জনকে পদ্মভূষণ এবং ১০৭ জনকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণে ভূষিত করা হয়েছে। তার দুই মেয়েই রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। 
পদ্ম পুরষ্কার নেওয়ার সময় স্বামী শিবানন্দকে সাধারণ কুর্তা-ধুতি পরে খালি পায়ে মঞ্চে উঠতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানাতে হাঁটু গেড়ে বসেন স্বামী শিবানন্দ। এতেই স্বামী শিবানন্দের সামনে মাথা নিচু করে মাটি স্পর্শ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। যে ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ১২৫ বছর বয়সী স্বামী শিবানন্দ বর্তমানে কাশীর বাসিন্দা। এদিকে দেশের সেরা পুরষ্কার পাওয়ায় দুর্গাকুণ্ডে স্বামী শিবানন্দ আশ্রমে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে তাঁর ভক্তদের মধ্যে।
পুরষ্কার পাওয়ার পর স্বামী শিবানন্দ বলেছেন, “আগামীতে যোগ ব্যায়াম এবং ভারতীয় জীবন শৈলীতে সকলের বিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। আমার জীবনধারা এবং যোগব্যায়াম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মানুষ তাদের জীবনকে সুস্থ করে তুলবে। যোগব্যায়াম ও প্রাণায়ামের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পেতে পারে মানুষ। আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষেরা এই পদ্ধতিতেই জীবন কাটিয়ে ১০০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে ছিল।”
শিবানন্দ বাবাজীর সুস্থ থাকার রহস্যটি রয়েছে দৈনন্দিন জীবনযাপনে। বাবাজীর ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, প্রতিদিন ব্রহ্ম মুহূর্তে তিনটে সময় শয্যা ত্যাগ করে এক ঘন্টা যোগব্যায়াম করেন। তারপর ঈশ্বরের আরাধনা দিয়ে দিন শুরু করেন। শিবানন্দ বাবাজী প্রথমে মা চণ্ডী ও পরে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা পাঠ করেন।
তিনি খুব স্বল্প পরিমাণে লবণ দেওয়া সেদ্ধ খাবার খান। যে তিনি ফল বা দুধ খান না। শিবানন্দ বাবা নিজেই বলেছেন যে সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার খাওয়ার জন্যই তিনি সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ। তাঁর চিকিৎসক ডক্টর এস কে আগরওয়াল বলেছেন যে বাবার সাত্ত্বিক খাবার ও নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে জীবন যাপন তাকে সুস্থ রেখেছে। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যোগ ব্যায়াম ও ভগবানের প্রতি ভক্তি।  এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এখন কোনও রোগ তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। এমনকী রক্তচাপের সমস্যা বা সুগারও নেই তাঁর।
শিবানন্দ বাবা তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করার জন্য মোদীজি ও ভারত সরকারের প্রতি তার আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি চিতেতসু ওয়াতানাবে হলেও শিবানন্দ বাবা হচ্ছে বিশ্বের প্রবীণতম এবং সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি।
শিবানন্দ বাবাজীর জন্ম ১৯৮৬ সালের ৮ আগস্ট  বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হরিপুর গ্রামে। পিতা শ্রীনাথ গোস্বামী মাতা ভগবতী দেবী। স্বামীজির একটা বড় সময় কেটেছে বিদেশে।  বিদেশি  অনুরাগীদের আমন্ত্রণে তিনি ইংল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশতাধিক দেশ সফর করেছেন। পরবর্তীকালে ১৯৫৯ সালে গুরুর নির্দেশে কাশীধামে ফিরে সাধনজগতে ডুব দেন। যোগসাধনার পাশাপাশি নিঃস্বার্থ সেবামূলক কাজেও ব্রতী এই সাধক। তিনি পৃথিবীর জাকজমক জীবন থেকে দূরে নির্জনে ভগবানের আরাধনায় লীন থাকেন। যোগব্যায়াম সম্পর্কে তাঁর রয়েছে অগাধ জ্ঞান। গত ৫০ বছর ধরে স্বামী শিবানন্দ পুরীতে অন্তত ৬০০ জন কুষ্ঠ আক্রান্ত ভিক্ষুককে ব্যক্তিগতভাবে সেবা করেছেন। ওই ব্যক্তিদের কাছে তিনি ‘জীবন্ত ঈশ্বর’ হিসেবে খ্যাত। 
জানা যায়, শিবানন্দ বাবাজীর মা-বাবা এবং তাঁর কয়েক বছরের বড় দিদি আরতি সহ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যতার কারণে ৪ বছর বয়সে উনাকে নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দের কাছে দিয়ে দেন। দুই বছর পর ৬ বছর বয়সে সন্ন্যাসীর সাথে বাড়িতে ফিরে এসে শুনেন দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। বাড়ীতে আসার ৭ দিন পর মা-বাবা একই দিনে মারা যান। তিনি স্বামী ওঙ্কারানন্দের সাথে পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ শেষ করে ১৯০১ সালে নবদ্বীপ গমন করেন ও সেখানে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি বিলেত যাত্রা করেন সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।


এ জাতীয় আরো খবর