রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

ভয়াবহ সংকটে শ্রীলঙ্কা

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্ক :
image

কলম্বো, ০৪ এপ্রিল : এককথায় দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, গত দু’বছর করোনা মহামারীর কারণে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। বিদেশ থেকে যে আয় হত সেখানে এখন ভাঁটা। এমনকি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য কাগজটুকু পর্যন্ত ব্যবস্থা করতে পারছেনা এই সরকার। ইতিমধ্যেই ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে এই দেশ। শুধু তাই নয় অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আমদানিও অনেক কমে গিয়েছে । চিকিৎসা সরঞ্জাম বা ওষুধ সেভাবে আর দেশে এসে পৌঁছাচ্ছে না, স্বাভাবিকভাবে হাসপাতালগুলির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এই ভয়াবহ অবস্থা এখন শ্রীলঙ্কায় । কিন্তু কেন এমন দুর্দশা ?
শ্রীলঙ্কা, যাকে রামায়ণের সময় ‘সোনার লঙ্কা’ বলা হত, ফেব্রুয়ারি থেকে এশিয়ার সমস্ত দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। গত ৩ মাসে পেট্রোলের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ডিজেলের তীব্র ঘাটতির কারণে, শ্রীলঙ্কা জুড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ।
প্রকৃতপক্ষে কোভিড বিধিনিষেধের কারণে পর্যটন শিল্পের পতন, লাগামহীন বিদেশী ঋণের বোঝা এবং কর ছাড় শ্রীলঙ্কার ডুবে যাওয়ার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা সর্বকালের সবচেয়ে গভীর অর্থনৈতিক সংকট, তীব্র মন্দা এবং তীব্র মুদ্রাস্ফীতির সাথে লড়াই করতে শুরু করেছে। জনরোষ এড়াতে শনিবার থেকে জরুরি অবস্থা ও ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে, রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার নজরকাড়া গুণ
•কলম্বো শুধু শ্রীলঙ্কার রাজধানী নয় হৃদয়ও বটে। সরকারী অফিস এবং সিস্টেম এখানে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, আবাসিক এলাকাটিকে মাউন্ট লেভানিয়া বলা হয়, যা কলম্বো থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। নাইট লাইফের রাজা, ক্লাবগুলোতে তোলপাড় চলে ভোর ৪টে পর্যন্ত। সমুদ্র সৈকতকে বলা হয় ‘গোল্ডেন মাইল’। গে-প্যারেড এবং রেইনবো কাইট ফেস্টিভ্যাল প্রতি বছর আনন্দের সাথে উদযাপিত হয়।
•ক্যান্ডি একটি মনোমুগ্ধকর হিল স্টেশন এবং শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এখানে ‘দাঁতের মন্দির’ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শন করা যায়। এখানে মহাত্মা বুদ্ধের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এটি শ্রীলঙ্কার একটি পবিত্র তীর্থস্থান। বাহিরওয়াকান্দা মন্দিরে মহাত্মা বুদ্ধের একটি দিব্য মূর্তি রয়েছে।
•ক্যান্ডিতে আসা বেশিরভাগ পর্যটক ‘পিনাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফানেজ’-এ যান, যা ক্যান্ডি থেকে মাত্র ৪০ কিমি এবং এক ঘন্টা দূরে। এটি বন্য হাতির নার্সারি। বিশেষত্ব হল, পৃথিবীর অধিকাংশ হাতি এখানে একসাথে পাওয়া যায়। পশ্চিম দিকে ওয়া নদীতে হাতির পালকে স্নান করতে দেখলে মন ভরে যাবে । হাতির স্নান দেখার সেরা সময় সকাল ১০.৩০ থেকে ১১.৩০ এবং বিকাল ৪ টে থেকে ৪.৩০ পর্যন্ত।
•সিগিরিয়া ক্যান্ডি থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। এটিকে অষ্টম আশ্চর্য বলা হয় এবং এটি পাথরের একটি বিশাল দুর্গ। প্রায় ২২৪৩ মিটার উঁচু অ্যাডামস পিকের নীচে শ্রী পদের দর্শন পেয়ে ভক্তরা ধন্য হন৷ শ্রী পদ হল মহাত্মা বুদ্ধের পবিত্র পদচিহ্ন, ১.৮ মিটার লম্বা এবং চওড়া। পাহাড়টি পার্শ্ববর্তী বনের চেয়ে ২০০০ মিটার উঁচু। প্রায় ১২৫০টি ধাপে আরোহণ করে, হাঁপাতে হাঁপাতে শীর্ষে পৌঁছান পর্যটকরা। উপরে উঠতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লাগে।

বিখ্যাত চা
বিশ্বের এক নম্বর চায়ের জনক শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিশ্ব বিখ্যাত চা হল ‘দিলমাহ’। পর্যটকরা অবশ্যই উপহার হিসাবে তাদের সাথে ‘দিলমাহ চা’ নিয়ে আসে। শ্রীলঙ্কার বিয়ারও অত্যন্ত প্রশংসিত। চা, মশলা এবং শুকনো ফল এখানে অত্যন্ত লোভনীয়। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ‘ওডেল’-এ কেনাকাটা উপভোগ করতে পারবেন।

দুটি বর্ষাকাল
শ্রীলঙ্কায় দুটি বর্ষাকাল রয়েছে। মে থেকে আগস্টের মধ্যে ‘ইয়ালা’ মুষলধারে বৃষ্টির মৌসুম। তারপর দ্বিতীয়বার অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ‘মহা’ মৌসুমে আসে মুষলধারে বৃষ্টি। মার্চ থেকে জুন সবচেয়ে উষ্ণ মাস এবং নভেম্বর থেকে জানুয়ারি সবচেয়ে ঠান্ডা। কিন্তু এই সোনার দেশের পরিস্থিতি আর একেবারেই স্বাভাবিক নেই। দেশজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের সংকট দেখা দেওয়ায়, বহু মানুষ এখানে আতঙ্কিত। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে মজুদ করে ফেলছেন।

মুদির দোকান, ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে পেট্রলপাম্পে লম্বা লাইন। সামান্য জিনিস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঝামেলা বেঁধে যাচ্ছে। সরকারি তরফ থেকে পেট্রল পাম্প গুলিতেই সেনা নিয়োগের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তার উপর শ্রীলঙ্কার ঘারে রয়েছে বিদেশি ঋণের বিশাল বোঝা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছে যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ শ্রীলঙ্কাকে এই মুহূর্তে সাহায্য না করে তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়ানো অত্যন্ত কঠিন। যদিও ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত।
সূত্র : প্রথম কলকাতা


এ জাতীয় আরো খবর